সামজেপুরি এবং গুত: অপ্রত্যাশিত পার্থক্য যা আপনাকে অবাক করবে

webmaster

삼재풀이와 굿의 차이 - **A serene Korean woman performing a 'Samjae-puri' ritual in a traditional temple setting.** She is ...

আপনারা সবাই কেমন আছেন? আজকাল কোরিয়ান সংস্কৃতি নিয়ে আমাদের আগ্রহ যেন দিন দিন বেড়েই চলেছে, তাই না? K-Drama, K-Pop তো বটেই, তাদের ঐতিহ্যবাহী আচার-অনুষ্ঠানগুলোও আমাদের বেশ কৌতূহলী করে তোলে। বিশেষ করে ভাগ্য বা দুর্ভাগ্যের মতো বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের সবারই কমবেশি চিন্তা থাকে। কোরিয়াতেও এমন কিছু প্রথা আছে যা খারাপ সময় কাটিয়ে উঠতে বা ভাগ্য ফেরাতে সাহায্য করে বলে বিশ্বাস করা হয়। এর মধ্যে ‘সামজে’ এবং ‘গুত’ খুবই পরিচিত। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই দুটো কি একই জিনিস, নাকি এদের মধ্যে কোনো পার্থক্য আছে?

আমি যখন কোরিয়ান সংস্কৃতি নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করছিলাম, তখন এই দুটো শব্দ আমার নজরে আসে। প্রথম দিকে আমারও মনে হয়েছিল, দুটোই কি একই রকম কিছু? কিন্তু একটু গভীরে যেতেই বুঝলাম, এদের মধ্যে সূক্ষ্ম কিছু পার্থক্য আছে যা জানাটা বেশ জরুরি। ‘সামজে’ মানে হলো জীবনের তিন বছরের দুর্ভাগ্য বা বিপদের সময়, আর ‘সামজে-পুরি’ হলো সেই বিপদ কাটিয়ে ওঠার একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতি। অন্যদিকে, ‘গুত’ হলো আরও বিস্তৃত একটি শামানিক আচার, যার উদ্দেশ্য আরও অনেক কিছু – যেমন অসুস্থতা দূর করা, পূর্বপুরুষদের সম্মান জানানো বা শুভকামনা করা। এই দুটো প্রথা আপাতদৃষ্টিতে একই মনে হলেও, এদের ধরন ও উদ্দেশ্য কিন্তু ভিন্ন। আমার মনে হয়, এমন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আপনাদেরও জেনে রাখা দরকার।তাহলে এই দুটো ঐতিহ্যবাহী প্রথার আসল পার্থক্যগুলো কি, কিভাবে এগুলো পালিত হয়, আর কেনই বা কোরিয়ানরা আজও এগুলো মেনে চলেন?

চলুন, নিচে বিস্তারিতভাবে জেনে নিই, নিশ্চিতভাবে জেনে নিই!

আপনারা সবাই কেমন আছেন? আজকাল কোরিয়ান সংস্কৃতি নিয়ে আমাদের আগ্রহ যেন দিন দিন বেড়েই চলেছে, তাই না? K-Drama, K-Pop তো বটেই, তাদের ঐতিহ্যবাহী আচার-অনুষ্ঠানগুলোও আমাদের বেশ কৌতূহলী করে তোলে। বিশেষ করে ভাগ্য বা দুর্ভাগ্যের মতো বিষয়গুলো নিয়ে আমাদের সবারই কমবেশি চিন্তা থাকে। কোরিয়াতেও এমন কিছু প্রথা আছে যা খারাপ সময় কাটিয়ে উঠতে বা ভাগ্য ফেরাতে সাহায্য করে বলে বিশ্বাস করা হয়। এর মধ্যে ‘সামজে’ এবং ‘গুত’ খুবই পরিচিত। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এই দুটো কি একই জিনিস, নাকি এদের মধ্যে কোনো পার্থক্য আছে?

আমি যখন কোরিয়ান সংস্কৃতি নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করছিলাম, তখন এই দুটো শব্দ আমার নজরে আসে। প্রথম দিকে আমারও মনে হয়েছিল, দুটোই কি একই রকম কিছু? কিন্তু একটু গভীরে যেতেই বুঝলাম, এদের মধ্যে সূক্ষ্ম কিছু পার্থক্য আছে যা জানাটা বেশ জরুরি। ‘সামজে’ মানে হলো জীবনের তিন বছরের দুর্ভাগ্য বা বিপদের সময়, আর ‘সামজে-পুরি’ হলো সেই বিপদ কাটিয়ে ওঠার একটি নির্দিষ্ট পদ্ধতি। অন্যদিকে, ‘গুত’ হলো আরও বিস্তৃত একটি শামানিক আচার, যার উদ্দেশ্য আরও অনেক কিছু – যেমন অসুস্থতা দূর করা, পূর্বপুরুষদের সম্মান জানানো বা শুভকামনা করা। এই দুটো প্রথা আপাতদৃষ্টিতে একই মনে হলেও, এদের ধরন ও উদ্দেশ্য কিন্তু ভিন্ন। আমার মনে হয়, এমন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আপনাদেরও জেনে রাখা দরকার।তাহলে এই দুটো ঐতিহ্যবাহী প্রথার আসল পার্থক্যগুলো কি, কিভাবে এগুলো পালিত হয়, আর কেনই বা কোরিয়ানরা আজও এগুলো মেনে চলেন?

চলুন, নিচে বিস্তারিতভাবে জেনে নিই, নিশ্চিতভাবে জেনে নিই!

ভাগ্যের চাকা ঘুরানোর কোরিয়ান উপায়: ‘সামজে’-এর আদ্যোপান্ত

삼재풀이와 굿의 차이 - **A serene Korean woman performing a 'Samjae-puri' ritual in a traditional temple setting.** She is ...

‘সামজে’ মানে কী, আর কেনই বা এর ভয়?

‘সামজে-পুরি’ কীভাবে কাজ করে: আমার অভিজ্ঞতা

কোরিয়ানদের মধ্যে ‘সামজে’ নিয়ে এক ধরনের চাপা উদ্বেগ আমি বহুবার লক্ষ্য করেছি। ‘সামজে’ বলতে মূলত তিন বছরের দুর্ভাগ্য বা খারাপ সময়কে বোঝায়, যা নির্দিষ্ট কিছু রাশিচক্রের মানুষের জীবনে প্রতি নয় বছর অন্তর আসে বলে বিশ্বাস করা হয়। এই সময়টা নাকি এমন যখন কোনো ব্যক্তির জীবনে অনাকাঙ্ক্ষিত বিপদ, দুর্ঘটনা বা অর্থনৈতিক ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। আমি যখন কোরিয়াতে আমার বন্ধুদের সাথে কথা বলছিলাম, তখন অনেকেই তাদের ‘সামজে’ সময় নিয়ে বেশ চিন্তিত ছিল। একজন বন্ধু তো মজা করে বলছিল, “আমার সামজে চলছে, তাই এই বছর কোনো নতুন কিছু করার ঝুঁকি নেব না!” এই ধারণাটা এতটাই গভীরে প্রোথিত যে, অনেকেই এই সময়টায় গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে বিরত থাকেন। এই তিন বছরের মধ্যে প্রথম বছরকে বলা হয় ‘ডুও সামজে’ (entrada de Samjae – বিপদের প্রবেশ), দ্বিতীয় বছরকে ‘নুল সামজে’ (permanencia de Samjae – বিপদের স্থায়িত্ব) এবং তৃতীয় বছরকে ‘নাল সামজে’ (salida de Samjae – বিপদ থেকে মুক্তি)। এটা কোরিয়ান লোকবিশ্বাসের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ, যা শত শত বছর ধরে চলে আসছে এবং আজও মানুষের মনে স্থান করে আছে।

‘সামজে-পুরি’ কীভাবে কাজ করে: আমার অভিজ্ঞতা

এই দুর্ভাগ্যের সময়টা কাটিয়ে ওঠার জন্য যে আচার পালন করা হয়, তাকেই বলে ‘সামজে-পুরি’। ‘পুরি’ মানে হলো মুক্তি বা সমাধান। আমার এক কোরিয়ান সহকর্মী আমাকে একবার বলেছিলেন যে, তার দাদি প্রতি বছর ‘সামজে’র প্রথম দিকে মন্দিরে গিয়ে বিশেষ প্রার্থনা করতেন এবং তাবিয (부적 – bujeok) সংগ্রহ করতেন। এই তাবিযগুলো নাকি অশুভ শক্তিকে দূরে রাখে এবং দুর্ভাগ্য থেকে রক্ষা করে। অনেকেই আবার বাড়িতে বা মন্দিরে বিশেষ ধরনের প্রার্থনা ও আচার পালন করেন, যেখানে চাল, ফল, মোমবাতি এবং ধূপ ব্যবহার করা হয়। এর মূল লক্ষ্য হলো অশুভ শক্তিকে শান্ত করা এবং ভালো ভাগ্যকে আমন্ত্রণ জানানো। ব্যক্তিগতভাবে আমি এই আচারগুলোতে অংশ না নিলেও, মানুষের বিশ্বাস এবং তাদের মানসিক স্বস্তি দেখে আমি অবাক হয়েছি। আমার মনে হয়, এটা শুধু একটি ধর্মীয় আচার নয়, বরং প্রতিকূল পরিস্থিতিতে মানুষের মনে সাহস যোগানোর একটি উপায়। অনেকেই বিশ্বাস করেন, ‘সামজে-পুরি’ করলে বড় কোনো বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায় অথবা বিপদের তীব্রতা কমে যায়। এটা কোরিয়ানদের জীবনে এমন এক বিশ্বাস, যা আধুনিকতার ছোঁয়াতেও ম্লান হয়নি।

‘গুত’: কেবলই ভাগ্য বদলানো নাকি আরও গভীর কিছু?

Advertisement

‘গুত’-এর বহুমুখী উদ্দেশ্য: পূর্বপুরুষ থেকে শুরু করে সুস্থ জীবন

একজন শামানের ভূমিকা: আমার চোখে দেখা ‘গুত’

কোরিয়ান সংস্কৃতির গভীরে যখন আমি আরও ডুব দিতে শুরু করি, তখন ‘গুত’ নামের এই শামানিক আচারটির মুখোমুখি হই। ‘গুত’ কেবল সামজের মতো ব্যক্তিগত দুর্ভাগ্য কাটানোর উপায় নয়, এর উদ্দেশ্য আরও অনেক বেশি ব্যাপক এবং বিস্তৃত। এটা রোগমুক্তি থেকে শুরু করে পূর্বপুরুষদের আত্মার শান্তি কামনা, ব্যবসা বা নতুন উদ্যোগের জন্য শুভকামনা, এমনকি অশুভ শক্তি বা ভূত তাড়ানোর জন্যও পালন করা হয়। আমার কাছে মনে হয়েছে, ‘গুত’ হলো এক ধরনের বৃহৎ প্রার্থনা সভা, যেখানে পরিবার বা সম্প্রদায়ের বৃহত্তর কল্যাণ কামনা করা হয়। কোরিয়ানদের জীবনে রোগ-শোক, ফসল ভালো না হওয়া, কিংবা পারিবারিক কলহের মতো বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য ঐতিহাসিকভাবে ‘গুত’-এর সাহায্য নেওয়া হয়েছে। এই আচারটি প্রায়শই বেশ নাটকীয় এবং রঙিন হয়, যেখানে শামান বা মুদাং (무당) একজন মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করেন এবং দেব-দেবী বা আত্মার সাথে যোগাযোগ স্থাপন করেন বলে বিশ্বাস করা হয়। এই বহুমুখী উদ্দেশ্যই ‘গুত’-কে ‘সামজে-পুরি’ থেকে একদম আলাদা করে তোলে, কারণ এর প্রভাব একটি নির্দিষ্ট ব্যক্তির ভাগ্যের চেয়েও অনেক বড় পরিসরে বিস্তৃত হয়।

একজন শামানের ভূমিকা: আমার চোখে দেখা ‘গুত’

‘গুত’-এর সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক হলো শামান বা মুদাং-এর ভূমিকা। আমি যখন একটি ছোট গ্রামের উৎসবে একটি ‘গুত’ দেখার সুযোগ পেয়েছিলাম, তখন আমি তাদের ক্ষমতা এবং পারফরম্যান্সে মুগ্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। একজন মুদাং কেবল মন্ত্র পাঠ করেন না, তারা বিশেষ পোশাক পরেন, বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার করে গান করেন, নাচেন এবং কখনও কখনও এমনভাবে আচরণ করেন যেন তারা কোনো আত্মার দ্বারা আচ্ছন্ন হয়েছেন। এই পুরো প্রক্রিয়াটি এক ধরনের সম্মোহক পরিবেশ তৈরি করে, যেখানে মনে হয় যেন অদৃশ্য কোনো জগতের সাথে যোগাযোগ স্থাপন করা হচ্ছে। মুদাং-রা পূর্বপুরুষদের আত্মা, পাহাড়ের দেবতা, নদীর দেবতা বা অন্য কোনো প্রাকৃতিক শক্তির সাথে কথা বলেন বলে বিশ্বাস করা হয়। তাদের কাজ হলো এই আত্মাগুলোকে শান্ত করা, তাদের অসন্তুষ্টি দূর করা এবং তাদের মাধ্যমে জীবিতদের জন্য আশীর্বাদ নিয়ে আসা। আমার কাছে এটি কেবল একটি ধর্মীয় আচার ছিল না, বরং এটি ছিল এক ধরনের পারফর্মিং আর্ট, যা কোরিয়ান সংস্কৃতির গভীর শিকড়কে তুলে ধরে। তারা শুধু বর্তমানের সমস্যাগুলোই সমাধান করেন না, বরং অতীত এবং ভবিষ্যতের মধ্যে একটি সেতু বন্ধনও করেন বলে আমি অনুভব করেছি।

উদ্দেশ্যগত পার্থক্য: কেন দুটি প্রথা এতো আলাদা?

ব্যক্তিগত বিপর্যয় নাকি বৃহত্তর সমাজের কল্যাণ?

কখন কোনটা বেছে নিতে হয়: কোরিয়ানদের সিদ্ধান্ত

‘সামজে’ এবং ‘গুত’-এর মধ্যে মূল পার্থক্যটা লুকিয়ে আছে এদের উদ্দেশ্যের গভীরে। ‘সামজে-পুরি’র প্রধান উদ্দেশ্য হলো একজন নির্দিষ্ট ব্যক্তির জীবনে আসা দুর্ভাগ্যের তিন বছরকে শান্ত করা বা এর প্রভাব কমানো। এটা একদম ব্যক্তিগত ব্যাপার, অনেকটা যেমন আমরা ব্যক্তিগতভাবে আমাদের রাশিফল দেখে সাবধান থাকি। আমার কোরিয়ান বন্ধুরা তাদের জন্মসাল অনুযায়ী তাদের ‘সামজে’র সময়কাল নিয়ে আলোচনা করতো, এবং তখন দেখতাম যে তাদের উদ্বেগটা ব্যক্তিগত সুরক্ষা ঘিরে ছিল। তারা নতুন ব্যবসা শুরু করতে বা বিয়ে করার মতো বড় সিদ্ধান্তগুলো এই সময়টায় এড়াতে চেষ্টা করত, কারণ তাদের বিশ্বাস ছিল যে এতে খারাপ ফল আসতে পারে। এটি মূলত ভবিষ্যদ্বাণীর উপর ভিত্তি করে ব্যক্তিগত সুরক্ষার একটি পদ্ধতি। অন্যদিকে, ‘গুত’ এর উদ্দেশ্য একেবারেই ভিন্ন। এটি প্রায়শই একটি নির্দিষ্ট সমস্যা সমাধানের জন্য, যেমন কোনো অসুস্থ ব্যক্তির আরোগ্য কামনা, একটি পরিবারের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি নিশ্চিত করা, বা একটি গ্রামের জন্য ভালো ফসলের প্রার্থনা করা। এটি কেবল ব্যক্তিগত নয়, বরং পরিবার, সম্প্রদায় বা নির্দিষ্ট কোনো সমস্যা সমাধানের বৃহত্তর উদ্দেশ্য নিয়ে পালিত হয়।

কখন কোনটা বেছে নিতে হয়: কোরিয়ানদের সিদ্ধান্ত

কোরিয়ানরা কখন ‘সামজে-পুরি’ এবং কখন ‘গুত’ বেছে নেয়, তা তাদের সমস্যার ধরন এবং গভীরতার উপর নির্ভর করে। যদি কোনো ব্যক্তি তাদের জন্মসাল অনুযায়ী ‘সামজে’র সময়কাল অতিক্রম করে, তাহলে তারা সাধারণত ‘সামজে-পুরি’র মাধ্যমে এর প্রতিকার খোঁজে। এটি তুলনামূলকভাবে কম জটিল এবং কম ব্যয়বহুল। বেশিরভাগ সময় মন্দিরে গিয়ে প্রার্থনা করা বা বাড়িতে ছোটখাটো আচার পালন করেই কাজ সারা হয়। কিন্তু যখন একটি পরিবার দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতায় ভুগছে, ব্যবসা বারবার ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে, বা unexplained কোনো সমস্যা হচ্ছে, তখন তারা ‘গুত’-এর কথা ভাবে। ‘গুত’ অনেক বেশি বিস্তৃত, সময়সাপেক্ষ এবং ব্যয়বহুল। এটি গভীর বিশ্বাস এবং তীব্র আকাঙ্ক্ষার ফল। আমি দেখেছি, যখন মানুষ জীবনের বড় ধরনের সংকটে পড়ে, যা তাদের কাছে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি কিছু মনে হয়, তখনই তারা একজন শামান বা মুদাং-এর দ্বারস্থ হয় এবং ‘গুত’ করানোর কথা বিবেচনা করে। দুটোই কোরিয়ানদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ, তবে তাদের ব্যবহারের প্রেক্ষাপট সম্পূর্ণ ভিন্ন। আমার মনে হয়, এটি অনেকটা ছোটখাটো অসুখে ঘরোয়া টোটকা আর গুরুতর রোগের জন্য বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে যাওয়ার মতোই।

আচার-অনুষ্ঠানের প্রকৃতি এবং পালনের ধরন

Advertisement

‘সামজে-পুরি’-এর সরলতা বনাম ‘গুত’-এর ব্যাপকতা

খরচ এবং সময়: কোনটি বেশি দাবি করে?

삼재풀이와 굿의 차이 - **A dynamic and vibrant scene of a 'Gut' ritual led by a charismatic Korean female shaman (mudang).*...
এই দুটো প্রথার মধ্যে আচার-অনুষ্ঠানের ধরনও বেশ ভিন্ন। ‘সামজে-পুরি’ সাধারণত তুলনামূলকভাবে সরল এবং ব্যক্তিগতভাবে পালন করা যায়। আমি দেখেছি, অনেকেই মন্দিরে গিয়ে বিশেষ প্রার্থনা করে বা একজন সন্ন্যাসীর কাছে গিয়ে কিছু নিয়মকানুন মেনে চলে। এমনকি অনেক পরিবার বাড়িতে বসেও ছোটখাটো কিছু আচার পালন করে থাকে, যেমন বিশেষ কিছু খাবার তৈরি করা বা নির্দিষ্ট স্থানে তাবিয ঝুলানো। এটি সাধারণত নির্দিষ্ট কিছু মন্ত্র পাঠ এবং একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশের মধ্যে সম্পন্ন হয়। কোনো বড় জনসমাগম বা জটিল প্রস্তুতি এর জন্য প্রয়োজন হয় না। এই সরলতা এটিকে সাধারণ মানুষের কাছে আরও সহজলভ্য করে তুলেছে। অন্যদিকে, ‘গুত’ একটি বিশাল এবং ব্যাপক আকারের অনুষ্ঠান। এটি কেবল মন্ত্র পাঠের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, বরং এতে শামানদের বিশেষ নাচ, গান, বাদ্যযন্ত্রের ব্যবহার, বর্ণিল পোশাক এবং বিভিন্ন ধরনের উপাচারের এক বিশাল সমাহার থাকে। এটি অনেকটা একটি ধর্মীয় উৎসবের মতো, যেখানে অনেক মানুষ একত্রিত হয় এবং একটি নাটকীয় পরিবেশ তৈরি হয়।

খরচ এবং সময়: কোনটি বেশি দাবি করে?

ব্যক্তিগতভাবে যখন আমি এই দুটি আচারের খরচ এবং সময় নিয়ে খোঁজখবর নিয়েছিলাম, তখন পার্থক্যটা বেশ স্পষ্ট হয়ে উঠেছিল। ‘সামজে-পুরি’ সাধারণত কম ব্যয়বহুল এবং কম সময়সাপেক্ষ। আপনি একটি মন্দিরে গিয়ে একটি ছোটখাটো সেবায় অংশ নিতে পারেন, যার জন্য সাধারণত একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ দান করতে হয়। এটি কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই শেষ হয়ে যায়। যারা নিজেদের ব্যক্তিগত দুর্ভাগ্য নিয়ে চিন্তিত, তারা সহজেই এই ধরনের আচার পালন করতে পারে, যা তাদের দৈনন্দিন জীবনে খুব বেশি প্রভাব ফেলে না। তবে ‘গুত’ একেবারেই অন্যরকম। এটি একটি অত্যন্ত ব্যয়বহুল অনুষ্ঠান হতে পারে, কারণ এর জন্য একজন পেশাদার শামান বা মুদাং-এর প্রয়োজন হয়, যিনি তার সময়, দক্ষতা এবং বিভিন্ন সরঞ্জাম নিয়ে আসেন। ‘গুত’ কয়েক ঘণ্টা থেকে শুরু করে পুরো একটি দিন এমনকি কয়েকদিন ধরেও চলতে পারে, যা এর জটিলতা এবং উদ্দেশ্যের উপর নির্ভর করে। এর জন্য প্রচুর উপকরণ, যেমন বিশেষ খাবার, পোশাক, বাদ্যযন্ত্র এবং সাজসজ্জার ব্যবস্থা করতে হয়। তাই, যখন কোরিয়ানরা একটি ‘গুত’ আয়োজন করার কথা ভাবে, তখন তাদের আর্থিক এবং সময় উভয় দিক থেকেই বড় ধরনের প্রস্তুতির প্রয়োজন হয়। এটি এমন একটি সিদ্ধান্ত যা সাধারণত গভীর সংকটের সময়ে নেওয়া হয়, যেখানে সমাধানের জন্য ব্যাপক প্রচেষ্টা প্রয়োজন।

কোরিয়ানদের বিশ্বাস ও মানসিকতায় এদের প্রভাব

ঐতিহ্য এবং আধুনিকতার সেতু: আজও প্রাসঙ্গিক কেন?

এক মানসিক স্বস্তি: কেন মানুষ আজও এগুলোর উপর ভরসা রাখে?

আশ্চর্যজনকভাবে, আধুনিক কোরিয়াতে যখন প্রযুক্তি এবং বিজ্ঞানের জয়জয়কার, তখনও এই প্রাচীন প্রথাগুলো মানুষের মনে গভীর প্রভাব ফেলে রেখেছে। ‘সামজে’ এবং ‘গুত’ শুধু পুরোনো দিনের গল্প নয়, বরং আজও কোরিয়ানদের দৈনন্দিন জীবন, বিশ্বাস এবং মানসিকতার এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। আমি দেখেছি, তরুণ প্রজন্মও এই প্রথাগুলো সম্পর্কে জানে এবং অনেকে এগুলোতে বিশ্বাসও রাখে। এটি আসলে ঐতিহ্য এবং আধুনিকতার মধ্যে এক অদ্ভুত সেতুবন্ধন। যদিও অনেক কোরিয়ান এখন খ্রিস্টান বা বৌদ্ধ ধর্মে বিশ্বাসী, তবুও শামানিক এই ঐতিহ্যগুলো তাদের সংস্কৃতির সাথে এতটাই মিশে আছে যে, এর প্রভাব থেকে নিজেদের পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন করা বেশ কঠিন। এটা অনেকটা আমাদের বাঙালি সংস্কৃতির আলপনা বা নকশি কাঁথার মতো – এর উৎপত্তি প্রাচীনকালে হলেও, আজও আমরা নানা উৎসব-পার্বণে এর ব্যবহার দেখি। কোরিয়ানদের কাছে এই প্রথাগুলো তাদের শিকড়, তাদের অতীত এবং তাদের পূর্বপুরুষদের প্রতি শ্রদ্ধার প্রতীক।

এক মানসিক স্বস্তি: কেন মানুষ আজও এগুলোর উপর ভরসা রাখে?

আমার মনে হয়, এই প্রথাগুলো আজও প্রাসঙ্গিক থাকার মূল কারণ হলো, এরা মানুষের মনে এক ধরনের মানসিক স্বস্তি এনে দেয়। জীবন যখন অনিশ্চয়তায় ভরা থাকে, তখন মানুষ এমন কিছু খোঁজে যা তাদের মনে সাহস যোগাতে পারে। ‘সামজে-পুরি’ বা ‘গুত’ সেই কাজটিই করে। যখন কোনো ব্যক্তি বা পরিবার দুর্ভাগ্যের মধ্য দিয়ে যায়, তখন এই আচারগুলো তাদের একটি আশা দেয়, একটি বিশ্বাস দেয় যে, তারা তাদের খারাপ পরিস্থিতি পরিবর্তন করতে পারে। এটি কেবল একটি আচার নয়, বরং এটি একটি মানসিক প্রক্রিয়া যেখানে মানুষ বিশ্বাস করে যে তারা তাদের সমস্যার সমাধান করছে। আমি দেখেছি, যারা এই আচারগুলো পালন করেন, তাদের চোখেমুখে এক ধরনের আত্মবিশ্বাস আর স্বস্তি ফিরে আসে। এটি বিজ্ঞানের যুক্তিতে না টিকলেও, মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য এবং আত্মবিশ্বাসের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাছাড়া, পরিবারের সবাই মিলে যখন এই ধরনের কোনো আচার পালন করে, তখন পারিবারিক বন্ধন আরও সুদৃঢ় হয় এবং একাত্মতার অনুভূতি তৈরি হয়, যা আধুনিক যুগেও একটি সামাজিক শক্তি হিসেবে কাজ করে।

‘সামজে’ বনাম ‘গুত’: এক নজরে মূল পার্থক্য

চলুন, ‘সামজে-পুরি’ এবং ‘গুত’-এর মূল পার্থক্যগুলো একটি ছোট্ট তালিকার মাধ্যমে সহজে বুঝে নেওয়া যাক:

বৈশিষ্ট্য সামজে-পুরি (삼재풀이) গুত (굿)
মূল উদ্দেশ্য তিন বছরের দুর্ভাগ্য বা বিপদ কাটানো রোগমুক্তি, পূর্বপুরুষের শান্তি, সৌভাগ্য কামনা, ভূত তাড়ানো, সম্প্রদায় বা পরিবারের কল্যাণ
কার জন্য প্রযোজ্য নির্দিষ্ট রাশিচক্রের ব্যক্তি ব্যক্তি, পরিবার বা সম্প্রদায় (নির্দিষ্ট সমস্যা বা উদ্দেশ্য অনুযায়ী)
আচরণের ধরন তুলনামূলকভাবে সরল, ব্যক্তিগত বা মন্দিরে পালিত বিস্তৃত, জটিল, শামান (মুদাং)-এর নেতৃত্বে পালিত, নাচ-গান ও বিশেষ উপাচার সহ
সময়কাল তুলনামূলকভাবে কম (কয়েক ঘণ্টা) কয়েক ঘণ্টা থেকে কয়েক দিন পর্যন্ত হতে পারে
খরচ সাধারণত কম অনেক বেশি হতে পারে, কারণ এটি শামানিক আচারের পূর্ণ প্যাকেজ
কে সম্পাদন করে মন্দিরের সন্ন্যাসী বা ব্যক্তিগত উদ্যোগে শামান (মুদাং)
Advertisement

আপনার জীবনে এর প্রভাব: কখন কোনটা কাজে লাগতে পারে?

দৈনন্দিন জীবনে এই প্রথাগুলোর স্থান

আমার ভাবনা: বিশ্বাস আর বাস্তবতার মিশেল

আমার মনে হয়, কোরিয়ান সংস্কৃতিতে ‘সামজে’ এবং ‘গুত’-এর মতো প্রথাগুলো আজও টিকে আছে কারণ এগুলো মানুষের জীবনের বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ এবং অনিশ্চয়তাকে মোকাবেলা করার জন্য ভিন্ন ভিন্ন সমাধান প্রস্তাব করে। আপনার যদি জন্মসাল অনুযায়ী খারাপ সময় চলছে বলে মনে হয় এবং আপনি এর থেকে মানসিক সুরক্ষা চান, তাহলে ‘সামজে-পুরি’ আপনার জন্য উপযুক্ত হতে পারে। এটি অনেকটা ছোটখাটো স্বাস্থ্য সমস্যার জন্য ঘরোয়া প্রতিকার খোঁজার মতো, যেখানে আপনি নিজে বা একটি মন্দিরের সহায়তায় কিছু সহজ পদক্ষেপ নিতে পারেন। এটি আপনাকে ব্যক্তিগতভাবে একটি মানসিক শান্তি দেবে এবং বিশ্বাস দেবে যে আপনি দুর্ভাগ্যের প্রভাব কমিয়ে আনছেন। অন্যদিকে, যদি আপনার পরিবারে কোনো গুরুতর বা দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা থাকে যা আপনার কাছে স্বাভাবিক মনে হচ্ছে না, যেমন কোনো কঠিন অসুখ, ব্যবসার ধারাবাহিক ক্ষতি, বা পারিবারিক অশান্তি, তখন ‘গুত’ একটি বৃহত্তর সমাধান হিসেবে কাজ করে। এটি একটি সামগ্রিক এবং গভীর আচার, যেখানে শামান একজন বিশেষজ্ঞের ভূমিকা পালন করেন এবং পুরো পরিবার বা সম্প্রদায়ের জন্য সমাধান ও আশীর্বাদ খোঁজেন।

আমার ভাবনা: বিশ্বাস আর বাস্তবতার মিশেল

ব্যক্তিগতভাবে বলতে গেলে, আমি যখন এই প্রথাগুলো সম্পর্কে আরও জানতে পারি, তখন মনে হয়েছে যে এগুলো শুধু প্রাচীন বিশ্বাস নয়, বরং মানুষের গভীর মানসিক এবং সামাজিক চাহিদাকে পূরণ করে। আমাদের জীবনে অনেক সময় এমন কিছু ঘটে যা আমরা নিয়ন্ত্রণ করতে পারি না বা যার কোনো যৌক্তিক ব্যাখ্যা খুঁজে পাই না। তখন মানুষ এমন কিছু খোঁজে যা তাদের আশা দিতে পারে, তাদের ভয় কমাতে পারে। ‘সামজে’ এবং ‘গুত’ সেই আশা এবং বিশ্বাসকেই ধারণ করে। এটি বিজ্ঞানসম্মত না হলেও, মানুষের মনে যে গভীর প্রভাব ফেলে, তাকে অস্বীকার করা যায় না। আমার মনে হয়, এই ঐতিহ্যগুলো কোরিয়ানদের জন্য এক ধরনের মানসিক অবলম্বন, যা তাদের কঠিন সময়ে এগিয়ে যাওয়ার সাহস যোগায়। এটি বিশ্বাস এবং বাস্তবতার এক সুন্দর মিশেল, যেখানে প্রাচীন জ্ঞান আধুনিক জীবনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় এক নতুন মাত্রা যোগ করে। এই প্রথাগুলো কোরিয়ান সংস্কৃতির যে গভীরতা এবং ঐতিহ্যকে ধারণ করে, তা সত্যিই আমাকে মুগ্ধ করে।আপনারা যারা কোরিয়ান সংস্কৃতি আর তাদের ঐতিহ্য নিয়ে আমার মতো কৌতূহলী, তাদের জন্য আজকের আলোচনাটা সত্যিই দারুণ ছিল, তাই না?

‘সামজে’র ব্যক্তিগত বিপদ কাটানোর প্রচেষ্টা থেকে শুরু করে ‘গুত’-এর ব্যাপক পারিবারিক বা সামাজিক কল্যাণ কামনার দিকটা—সবকিছুই কোরিয়ানদের বিশ্বাস আর মানসিকতার গভীরে প্রোথিত। আমি যখন এই প্রথাগুলো নিয়ে গবেষণা করছিলাম, তখন বারবার মনে হচ্ছিল, বিজ্ঞান আর প্রযুক্তির এই যুগেও কীভাবে মানুষের মনে এসব প্রাচীন বিশ্বাসের প্রভাব অক্ষুণ্ণ থাকে। আসলে, জীবনের নানা অনিশ্চয়তা আর চ্যালেঞ্জের মুখে মানুষ যখন দিশেহারা হয়, তখন এমন কিছু প্রথা তাদের মানসিক শক্তি যোগায়, একটা ভরসা দেয়। আমার মনে হয়, এই প্রথাগুলো শুধু অতীতেরই অংশ নয়, বরং বর্তমানের সঙ্গেও গভীরভাবে যুক্ত, যা কোরিয়ানদের আত্মপরিচয় এবং সামাজিক বন্ধনকে আরও সুদৃঢ় করে। এই বিশ্বাসগুলো তাদের সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ, যা তাদের গল্প, গান আর প্রতিদিনের জীবনের অংশ হয়ে মিশে আছে।

কিছু দরকারি তথ্য

এখানে আপনাদের জন্য কিছু অতিরিক্ত তথ্য রইলো, যা কোরিয়ান সংস্কৃতিকে আরও ভালোভাবে বুঝতে সাহায্য করবে এবং দৈনন্দিন জীবনেও কাজে লাগতে পারে:

১. কোরিয়ান ক্যালেন্ডার অনুযায়ী আপনার জন্মসাল এবং ‘সামজে’ সময়কাল সম্পর্কে জেনে নিন। অনেক ওয়েবসাইট এবং ব্লগ আছে যেখানে এই তথ্য সহজে পাওয়া যায়। এটা জানা থাকলে আপনি মানসিক প্রস্তুতি নিতে পারবেন এবং এই সময়ে গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে একটু বেশি সতর্ক থাকতে পারবেন।

২. কোরিয়ান নববর্ষ, ‘সলনাল’ (설날)-এর সময় অনেকেই মন্দিরে যান এবং নিজেদের বা পরিবারের সদস্যদের জন্য ‘সামজে-পুরি’ করান। এটি নতুন বছরের শুরুতে দুর্ভাগ্য দূর করার একটি প্রচলিত উপায়। যদি কোরিয়াতে থাকেন, তবে কাছাকাছি কোনো মন্দিরে গিয়ে এই বিষয়ে খোঁজ নিতে পারেন।

৩. কোরিয়ান লোকবিশ্বাস অনুযায়ী, কিছু রঙের পোশাক বা বস্তু অশুভ শক্তি থেকে রক্ষা করে। যেমন, লাল রঙকে প্রায়শই অশুভ তাড়ানোর প্রতীক হিসেবে দেখা হয়। কঠিন সময়ে লাল রঙের কোনো ছোট জিনিস সাথে রাখতে পারেন, এতে হয়তো আপনার মন কিছুটা শান্তি পাবে।

৪. কোরিয়ান সংস্কৃতিতে পূর্বপুরুষদের সম্মান জানানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ‘জেসা’ (제사) বা পূর্বপুরুষদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর মাধ্যমে পরিবারের শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করা হয়। এটি সরাসরি ‘গুত’ না হলেও, পূর্বপুরুষদের আশীর্বাদ পাওয়ার একটি পারিবারিক প্রথা।

৫. যদি আপনি কোরিয়ান ভাষা শিখছেন, তবে ‘সামজে’ এবং ‘গুত’ সম্পর্কিত শব্দগুলো যেমন – 부적 (বুজোক – তাবিয), 무당 (মুদাং – শামান), 액운 (এগুন – দুর্ভাগ্য) – জেনে রাখা আপনার শব্দভান্ডার বাড়াতে এবং সংস্কৃতিকে আরও গভীরভাবে বুঝতে সাহায্য করবে।

Advertisement

গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলির সারসংক্ষেপ

আজকের আলোচনায় আমরা দেখলাম ‘সামজে-পুরি’ এবং ‘গুত’ কোরিয়ানদের জীবনে কিভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, যদিও এদের উদ্দেশ্য এবং পালনের ধরনে বেশ পার্থক্য আছে। ‘সামজে-পুরি’ হলো মূলত ব্যক্তিগত দুর্ভাগ্য কাটানোর একটি সহজ এবং কম ব্যয়বহুল উপায়, যা নির্দিষ্ট রাশিচক্রের ব্যক্তিদের জন্য তিন বছরের খারাপ সময়কে শান্ত করতে সাহায্য করে। আমি নিজে যেমন কোরিয়ান বন্ধুদের দেখেছি, তারা তাদের ‘সামজে’ সময় নিয়ে বেশ সতর্ক থাকে এবং এর প্রভাব কমানোর জন্য বিভিন্ন আচার পালন করে। অন্যদিকে, ‘গুত’ হলো আরও ব্যাপক এবং গভীর একটি শামানিক আচার, যা রোগমুক্তি, পূর্বপুরুষের আত্মার শান্তি, ব্যবসা বা পারিবারিক সমৃদ্ধি, এমনকি অশুভ শক্তি তাড়ানোর মতো বৃহত্তর উদ্দেশ্য নিয়ে পালিত হয়। এটি একজন শামান বা মুদাং-এর নেতৃত্বে অত্যন্ত জটিল এবং বর্ণিলভাবে সম্পন্ন হয়, যা সময় এবং অর্থ উভয়ই বেশি দাবি করে। আমার মনে হয়, এই প্রথাগুলো কোরিয়ানদের মানসিক স্বস্তি দেয় এবং প্রতিকূল পরিস্থিতিতে তাদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে সাহায্য করে। আধুনিকতার মাঝেও এই ঐতিহ্যগুলো তাদের সংস্কৃতির অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে টিকে আছে, যা তাদের ইতিহাস, বিশ্বাস এবং সামাজিক মূল্যবোধকে ধারণ করে।

প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQ) 📖

প্র: ‘সামজে’ এবং ‘গুত’ এর মধ্যে প্রধান পার্থক্য কী?

উ: আমার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, ‘সামজে’ এবং ‘গুত’ দুটোই কোরিয়ানদের জীবনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে, কিন্তু এদের মূল উদ্দেশ্য আর ধরন একেবারেই আলাদা। ‘সামজে’ (삼재) হলো একটি বিশ্বাস যে, জীবনের একটি নির্দিষ্ট তিন বছরের চক্রে একজন ব্যক্তি দুর্ভাগ্য বা বিপদের মুখোমুখি হতে পারে। এটি অনেকটা আমাদের শনির দশা বা এমন কোনো গ্রহের প্রভাবের মতো। এই সময়টায় সাধারণত স্বাস্থ্যহানি, আর্থিক ক্ষতি বা সম্পর্কের টানাপোড়েন দেখা দিতে পারে। আর এই ‘সামজে’ কাটিয়ে ওঠার জন্য যে আচার পালন করা হয়, তাকে বলা হয় ‘সামজে-পুরি’ (삼재풀이)। এখানে মূল লক্ষ্য থাকে দুর্ভাগ্যকে দূরে ঠেলে দেওয়া এবং বিপদ থেকে মুক্তি পাওয়া।অন্যদিকে, ‘গুত’ (굿) হলো আরও ব্যাপক একটি শামানিক আচার, যা কোরিয়ান লোকধর্মের একটি কেন্দ্রীয় অংশ। ‘গুত’ শুধুমাত্র দুর্ভাগ্য দূর করার জন্য নয়, এর উদ্দেশ্য আরও অনেক বিস্তৃত। এটি অসুস্থতা নিরাময়, পূর্বপুরুষদের আত্মার শান্তি কামনা, শস্যের ভালো ফলন, সম্প্রদায় বা গ্রামের মঙ্গল, এমনকি শুভকামনা ও সমৃদ্ধি আনার জন্যও করা হয়। ‘গুত’ একজন শামান (মুদাং বা মানশিন) দ্বারা পরিচালিত হয়, যেখানে গান, নাচ, মন্ত্রপাঠ এবং দেবতাদের কাছে নৈবেদ্য নিবেদন করা হয়। শামানরা মনে করেন, এর মাধ্যমে তারা মানুষ ও আত্মিক জগতের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করেন। আমার মনে হয়, সামজে যেখানে ব্যক্তিগত দুর্ভাগ্যের তিন বছরের চক্র, গুত সেখানে জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সামগ্রিক মঙ্গল কামনার জন্য একটি বৃহৎ ধর্মীয় অনুষ্ঠান।

প্র: ‘সামজে’ কখন আসে এবং এর প্রভাব থেকে বাঁচতে কোরিয়ানরা সাধারণত কী করে?

উ: কোরিয়ান ঐতিহ্য অনুযায়ী, ‘সামজে’ ১২টি রাশিচক্রের (চীনা রাশিচক্রের মতো) উপর ভিত্তি করে আসে। প্রতি ১২ বছর অন্তর ৩ বছর করে প্রতিটি রাশির জীবনে ‘সামজে’ আসে। এই তিন বছরকে সাধারণত তিন ভাগে ভাগ করা হয়: প্রবেশ সামজে (들삼재 – যখন দুর্ভাগ্য শুরু হয়), মাঝের সামজে (눌삼재 – যখন দুর্ভাগ্যের প্রভাব সবচেয়ে বেশি থাকে), এবং প্রস্থান সামজে (날삼재 – যখন দুর্ভাগ্য শেষ হয়)। যেমন, যদি কোনো নির্দিষ্ট রাশির জন্য এটি হয়, তবে পরপর তিন বছর সেই রাশির জাতকরা এই দুর্ভাগ্য অনুভব করেন।আমার কোরিয়ান বন্ধুদের সাথে কথা বলে এবং বিভিন্ন লেখায় পড়ে আমি দেখেছি, এই ‘সামজে’র প্রভাব কমাতে কোরিয়ানরা বেশ কিছু কাজ করে থাকে। সবচেয়ে প্রচলিত উপায় হলো ‘সামজে-পুরি’ (삼재풀이) আচার পালন করা। এর মধ্যে তাবিজ পোড়ানো, মন্দ আত্মাদের তাড়ানোর জন্য নির্দিষ্ট কিছু জিনিসপত্র ব্যবহার করা বা শামানদের মাধ্যমে ছোট আকারের আচার পালন করা অন্তর্ভুক্ত। অনেক সময় তারা মন্দ আত্মাদের হাত থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য বিশেষ ধরনের কাগজ বা কাপড় দিয়ে তৈরি তাবিজ সাথে রাখে বা বাড়ির দরজায় ঝুলিয়ে রাখে। কেউ কেউ নির্দিষ্ট মন্দিরে গিয়ে প্রার্থনা করে বা দান করে থাকে। তাদের বিশ্বাস, এই আচার-অনুষ্ঠানগুলো পালনের মাধ্যমে ‘সামজে’র খারাপ প্রভাব কিছুটা কমানো যায় বা সম্পূর্ণভাবে দূর করা যায়। ব্যক্তিগতভাবে, আমি মনে করি এটি অনেকটা আমাদের এখানে গ্রহ-নক্ষত্রের শান্তির জন্য পূজা-অর্চনা বা রত্ন ধারণ করার মতো।

প্র: ‘গুত’ আচারের সময় শামানরা কী কী করেন এবং এর তাৎপর্য কী?

উ: ‘গুত’ আচারটি সত্যিই দেখার মতো একটি অভিজ্ঞতা! একজন শামান, যাকে কোরিয়াতে ‘মুদাং’ (무당) বা ‘মানশিন’ (만신) বলা হয়, এই আচারটি পরিচালনা করেন। ‘গুত’-এর সময় শামানরা বিভিন্ন ধরনের পোশাক পরিধান করেন, যা তারা যে দেবতাকে আহ্বান করছেন তার উপর নির্ভর করে। তারা ছন্দময় নাচ, গান এবং মন্ত্রপাঠের মাধ্যমে দেবতাদের বা পূর্বপুরুষদের আত্মাকে আমন্ত্রণ জানান। কখনও কখনও শামানরা এতটাই ঘোরের মধ্যে চলে যান যে মনে হয় যেন কোনো দেবতা বা আত্মা তাদের শরীরে ভর করেছেন। এই সময় তারা ভবিষ্যৎবাণী করেন, সমস্যার সমাধান বলে দেন, অথবা কোনো বার্তা দেন।’গুত’-এর তাৎপর্য অনেক গভীর। এটি কেবল একটি অনুষ্ঠান নয়, বরং এটি মানুষ এবং অদৃশ্য আত্মিক শক্তির মধ্যে একটি সেতুবন্ধন। কোরিয়ানরা বিশ্বাস করে, ‘গুত’ এর মাধ্যমে তারা দেবতাদের সন্তুষ্ট করতে পারে এবং তাদের কাছ থেকে আশীর্বাদ লাভ করতে পারে। এর ফলে অসুস্থতা নিরাময় হতে পারে, পরিবারে শান্তি আসতে পারে, ব্যবসা সফল হতে পারে বা গ্রামের সামগ্রিক মঙ্গল হতে পারে। অনেক সময় এটি দুঃখী আত্মাদের সান্ত্বনা দিতে এবং পরলোকে তাদের পথ দেখাতেও ব্যবহৃত হয়। আমার পর্যবেক্ষণ হলো, ‘গুত’ কোরিয়ানদের সামাজিক ও মানসিক জীবনে আজও একটি শক্তিশালী স্থান দখল করে আছে, বিশেষ করে যখন তারা জীবনের কঠিন বা হতাশাজনক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়। এটি তাদের মানসিক শান্তি এবং আশা যোগায়, যা কোনো মূল্য দিয়ে কেনা যায় না।

📚 তথ্যসূত্র